তোমাকে যেদিন প্রথম দেখেছিলাম, কেন জানিনা ভালো লেগেগিয়েছিল। প্রথম দেখার ভাললাগাটা ভালবাসার অনুভুতি ছাড়াই হয়েছিল। আর তা ছাড়া ভালবাসার তখন কি ই বা বুঝি! সবে হাইস্কুল এ উঠেছি। তুমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়তে। তোমার আপু আমাদের স্কুলে উপরের ক্লাসে পড়তেন। আমার তখন বাংলা ক্লাস চলছিল। শেষ ক্লাস- মনির স্যার এর। স্যার অনেক সুন্দর করে ক্লাস নিতেন। ঐদিন পড়ানোর পরিবর্তে স্যার ক্লাসে নাটকের অভিনয়ের আয়োজন করেছিলেন। আমরা খুব উপভোগ করছিলাম- আবার ভয় ও পাচ্ছিলাম-এবার বুঝি আমার পালা এল, এই ভেবে! স্যার বেছে বেছে একজন করে ডাকছিলেন আর অভিনয় করে দেখাতে বলছিলেন। বিষয় টা উপভোগ্য -(যদি আমার পালা না আসত)! এমন সময় স্যার দরজার বাইরে হাতের ইশারায় কাউকে যেন ডাকলেন। একটা মেয়ে ভিতরে আসল- আর প্রথম তোমাকে দেখলাম। জানতে পারলাম তুমি স্কুল ছু্টির পর এসেছ তোমার আপুর ছুটি হলে আপুকে সাথে নিয়ে বাড়ি যাবে বলে। তোমার আপুর ক্লাস চলছিল আমাদের ক্লাসের পাশের ক্লাসে, আর তুমি আমাদের ক্লাসের দরজার সামনে দাড়িয়ে অভিনয় দেখছিলে।
কি নাম তোমার ? -স্যার জিজ্ঞ্যেস করলেন
জুঁই -তোমার সুন্দর করে দেওয়া উত্তর
এবার স্যার তোমাকে অভিনয় করতে বললেন আর তুমি নির্দিধায় অভিনয় করে দেখালে। হাততালিতে ক্লাস ভরে উঠল…
একই গ্রামে হলেও তোমাদের বাড়ি আমাদের বাড়ি থেকে বেশ দূরে হওয়ার জন্য আমি তোমাকে ভালো করে চিনতাম না। তোমার আপুকে অবশ্য আগে থেকেই চিনতাম কারন উনি আমাদের স্কুলেই পড়তেন।
যা হোক তুমি প্রাইমারি পেরিয়ে ভর্তি হলে দুরের সরকারি হাইস্কুলে। তোমাকে স্কুলে যেতে হত আমাদের স্কুলের সামনে দিয়ে। আর তাই স্কুলে যাবার সময় প্রায় রোজই দেখতাম তোমাকে । ঐ একবার দেখার জন্য আমি রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতাম অনেক্ষন- কখন তুমি যাবে, ততদিনে কেন জানিনা ভালবেসে ফেলেছি তোমাকে ! যদি প্রশ্ন কর কেন ভালবেসেছিলাম- বলব জানিনা। আর সেই ভালবাসাটা আজো আছে….
আস্তে আস্তে জানতে পারলাম তুমি নাকি খুব ভালো ছাত্রী, আর তাই তোমাকে গ্রাম থেকে ৬কিলোমিটার দূরে শহরের সরকারী স্কুলে ভর্তি করা হয়েছে। যদিও আমিও তখন গ্রামের নামকরা ছাত্র ছিলাম, ক্লাস রোল কখনো ১ ছাড়া ২ হয়নি, তবুও তোমার মত কখনো ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পাইনি, তোমার মত সরকারি স্কুলে ও পড়তাম না।
যখন ক্লাস নাইনে উঠলে তখন তুমি তোমার বাড়ির সবাইর সাথে ঐ শহরে যেয়ে থাকতে লাগলে -কারন সামনে তোমার এস এস সি পরীক্ষা। যাতায়াতের জন্য পড়াশুনার অসুবিধা হবে তাই। আর তো তুমি আমাদের স্কুলের সামনে দিয়ে যাবে না। তাহলে তোমাকে দেখব কি করে? কিন্তু না দেখলেও তো হবে না। কারন এতদিন দেখতে দেখতে তুমি যে আমার মনের একটা অংশ হয়ে গেছ !
আমি তখন টেন এ পড়ি। জানতে পারলাম তুমি নাকি বিজ্ঞান বিভাগ নিয়েছ। আমিও বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র। তাই ভালো লাগল তুমি বিজ্ঞান নিয়েছ জেনে। কিন্তু তোমাকে দেখি কি করে?
খোজ নিলাম তুমি কোন কোন স্যারের কাছে প্রাইভেট পড় । বাবা কে জানালাম আমার শহরের স্কুলের স্যারের কাছে প্রাইভেট পড়তে হবে। বাবা আমাকে নিয়ে গেলেন। কিন্তু তোমার স্কুলের গণিত ও বিজ্ঞানের স্যাররা আমাকে পড়াতে রাজি হলেন না- ব্যাচ নাকি কভার। আর আমি টেনে পড়ি, তারা যাদের পড়ায় তাদের একবারে নাইন থেকে পড়ায়। টেন থেকে কাওকে পড়ায় না। বাবা অনুরোধ করলেন কিন্তু একই উত্তর। তুমি তো জানো আমার বাবা ও শিক্ষক। এবার তিনি রেগে গিয়ে প্রস্তাব দিলেন সম্পুর্ন ব্যাচ এর টাকা দিবেন- তার ছেলেকে পড়াতে হবেই। এইবার তারা রাজি হলেন। কিন্তু আমিতো এখন পড়ব না ! কারণ যে সময় আমার জন্য বরাদ্দ হল সে সময়ের আগে/পরে তুমি পড়তে আসবে না। তাহলে আমার গ্রাম থেকে ৬ কিলো সাইকেল চালিয়ে যেয়ে লাভ কি? তাই বাবা কে বলে দিলাম ওসব স্যারের নিকট পড়ব না…
নতুন একটা খবরে মনটা আনন্দে ভরে উঠল -তুমি নাকি হেমন্ত নামের কোন এক স্যারের কাছে ইংরেজি প্রাইভেট পড় আর ঐ স্যার নাকি ব্যাচে সবাইকেই পড়ায়। আব্বুকে বললাম। আব্বু হেমন্ত বাবুকে বলাতে উত্তর এল- স্যার আপনার ছেলেকে যখন খুশি আসতে বলবেন, আমার কোনো আপত্তি নাই। আমার ও বিকাল ছাড়া কোনো সময় নেই, তাই খেলাধুলা করে আর কি হবে, যদি পড়াশুনাই ভাল না হল ? যতই কস্ট হোক আমি বিকালে সময় ম্যানেজ করতে পারলাম- কেননা তুমিতো বিকালের ওই সময়টাতেই পড় ! ওই দিনগুলোর কথা কি তোমার মনে পড়ে ? স্যারের ওই ঘরটায় এতদুর থেকে সাইকেল চালিয়ে যেয়ে যখন দেখতাম তুমি এসেছ, মনে কি যে শান্তি লাগত বলে বুঝাতে পারব না, কি যেনো এক অনুভুতি। কিন্তু কখনো তোমার সাথে কথা বলার সুযোগ হইনি, আসলে সাহস করে উঠতে পারিনি। তবে এটুকু নিশ্চয়ই বুঝতে পারছ শুধু তোমাকে দেখার জন্যই আমি ঐ স্যারের কাছে যেতাম।
একদিন খবর পেলাম তোমাকে নাকি ntv তে দেখাবে ! তোমাদের স্কুলের কোনো এক নাচের অনুষ্ঠানে তুমিও নাকি নেচেছ, আর তাই ntv রাতে সম্প্রচার করবে। এইত বিপদে পড়লাম, গ্রামে তো ডিশ লাইন নাই, কি করি ? শহরে বিশাল কাজ আছে, স্যারের কাছে যেতে হবে , নোট দিবে, এবং তা আজই লাগবে- এইসব শত সতের আম্মাকে বুঝিয়ে সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। একা যাই কি করে - তাই এক বন্ধুকে ম্যানেজ করলাম, বললাম আম্মা এক জরুরি কাজে আমাকে এক্ষুনি শহরে যেতে বলেছেন, তুই চল…
এস,এস,সি, পরীক্ষা শেষ হল। রেজাল্ট দিল গ্রেডিং সিস্টেমে - এ পেলাম। ভর্তি হলাম তোমার স্কুলের পাশের কলেজে, (তুমি তো জানোই, ভর্তি হবার মত কলেজ ঐ একটাই ছিল- আর অন্য কলেজে বিজ্ঞান বিভাগ ছিল না)। এইবার তো দিনে কয়েকবার করে তোমাকে দেখার চান্স ! চেষ্টা করতাম যখন তুমি যে রাস্তা দিয়ে যাবে, সেই রাস্তা দিয়ে যাবার। তোমাকে দেখার আনন্দ আদৌ আমি ভাষায় প্রকাশ করে বুঝাতে পারব না। কিন্তু কখনোই কিছু বলতে বা বুঝতে দিতে চাইতাম না, তুমি কি মনে করবে এই ভেবে। আমার পড়াশুনা ও ভালোই হচ্ছিল, যাতায়াতের একটু কষ্ট ছিল এই যা। তারপর ও ক্লাসের সেরাদের একজন হিসেবে শীঘ্রই আত্নপ্রকাশ করলাম। আশাই আছি তুমি এস,এস,সি, টা পাস করে কবে আমাদের কলেজে এসে ভর্তি হবে। তুমি এলে এবার আর চুপ করে থাকব না। না বলা ভালোবাসাটার কথা জানাবোই। কেমন করে তোমার সাথে কথা বলা আরম্ভ করা যাবে, কিভাবে তোমাকে খুশি করা যাবে, ইত্যাদি কল্পনায় আমার ১ম বর্ষের ক্লাস প্রায় শেষের পথে। সামনে ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষা। প্রস্তুতি ও ভালো, কিন্তু আমার মত দুর্ভাগার জন্য ভালো বলে মনে হয় কিছু নেই। আকস্মিক অসুস্থতার প্রচন্ডতায় হাসপাতালে ভর্তি হতে হল আমাকে। অনেকদিন ছিলাম, আর এর মদ্ধে ইয়ার ফাইনাল হয়ে গেলো। আব্বু আম্মু সান্তনা দিলেন। স্যাররা ও সান্তনা দিলেন, এবং বললেন এক ইয়ার লস যাওয়া কোনো ব্যাপার না। অবশ্য সেরকম একটা চেস্টা করলে ২য় বর্ষের ক্লাস শুরু করে দিতে পারতাম, প্রিন্সিপাল স্যার ও রাজি ছিলেন - শরীরটা তখনো ঠিক হয়ে পারেনি। তাই সবার পরামর্শে ১ম বর্ষেই থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। আবার ভালো করে পড়ে সামনের পরীক্ষায় এটেন্ড করা যাবে । আর ওদিকদিয়ে তোমার পরীক্ষা শেষ হলো, রেজাল্ট ও দিল- জানতে পারলাম তুমি এ প্লাস পেয়েছ। জেনে ভাল লাগল, খুশি হলাম। এসে ভর্তি হলে আমাদের কলেজে। আর আমি তখন আবারো ১ম বর্ষে ! ক্লাস শুরু হল আর ভুলটা বুঝতে পারলাম। ক্লাসে যেতে ইচ্ছা করত না। যাই বা কি করে? জুনিওরদের সাথে মানিয়ে নেওয়াটা অত সহজ নয়, তারপর ও হয়তবা পারতাম। কিন্তু ক্লাসে যেয়ে তোমাকে দেখলেই শরীরটা কেমন গুলিয়ে উঠত, আমার জন্য কেমন যেনো একটা লজ্জাজনক অবস্থার সৃষ্টি হত। নিজেকে হেও বলে মনে হত। ক্লাসে যেতাম না বললেই চলে। পড়াশুনাও খারাপ হতে লাগল। সবই তো পড়া আছে বলে মনে হয়, তাই একই জিনিষ পুনরায় পড়তে মনে চাইত না। ফলে একটা সময় পর চর্চার অভাবে আমি প্রায় সবই ভুলতে বসলাম। আসলে রেজাল্ট যাই হত না কেনো আমার ২য় বর্ষের ক্লাসে যোগ দেওয়াই উচিত ছিল। আর নিজের ও বেশকিছু গাফিলতি ছিল। ফলে তোমাদের সাথে ২য় বর্ষে উঠলেও পড়াশুনা আর ভালো হলো না। ১ম ভুল করেছি ইয়ার গ্যাপ দিয়ে, আর ২য় ভুল আই,এস,সি পরীক্ষা না দিয়ে। আর ঐ ভুলের মাশুল আজও দিচ্ছি। ঐ সময় কিভাবে যে কি হয়ে গেলো আমি আজো বুঝতে পারি না। আর তোমাকে ভালোবাসার কথা বলা তো দূরে থাক, ভাবতেই কষ্ট হত। আমি কি করে তোমার উপযুক্ত হই? পরীক্ষা দিতে পারলাম না, আসলে দিলাম না। টেস্ট পরীক্ষা না হয় খারাপ হয়েছিল, প্রিন্সিপাল স্যার না হয় বকেছিলেন, তাই বলে পরীক্ষা না দিবার জেদ টা আমার করা উচিত হয় নি। আর এসব কিছুর পর তোমাকে কিছু জানানোর চিন্তা পুরোপুরি বাদ দিলাম। আমার মতো ছেলের তোমার সাথে সম্পর্ক হয় কি করে ? তাই বলে ভেবোনা ভুলে গিয়েছিলাম, আসলে একদিনের জন্যও বোধহয় ভুলে থাকতে পারিনি তোমাকে….
ইন্টারমিডিয়েট পাসের পর তুমি মেডিকেলে ভর্তি হলে, আর আমি পরীক্ষা না দিয়ে পলিটেকনিকে। এবার গ্রাম থেকে শত কিলোমিটার দূরে হলেও আমরা পাশাপাশি থাকি। জানোকি, তোমাদের কলেজ থেকে আমার কলেজের দুরত্ত মাত্র ৩/৪ কিলোমিটার? যদিও গত ৩/সাড়ে ৩ বছরে আমাদের দেখা হইনি বললেই চলে, কিন্তু আমি মাঝে মধ্যে লুকিয়ে লুকিয়ে তোমাকে দেখতে যেতাম তোমার কলেজে।
মনে মনে থাকা এই ভালোবাসা হয়তোবা কখনোই প্রকাশ পেতো না, যদি না আজ এতো বছর পর তোমার কাছাকাছি আসার সুযোগ পেতাম। ঐ দিন আমার যাবার সেরকম ইচ্ছা ছিল না, আপুর পীড়াপীড়িতেই গেলাম। আমি কি জানতাম আপুর বান্ধবি তোমার রুমমেট, আর তুমি ও আসবে সাথে। আপু আমাকে বললেন তোর শহরে এসেছি, আমাকে চিনিয়ে নিয়ে চল। আমি জানতে চাইলাম কোথায় যাবি? বললেন যে উনার বান্ধবি আছেন মেডিকেলে -ফাইনাল ইয়ারে, তার সাথে ঘুরবেন, লাঞ্চ করবেন, আমার ও সাথে থাকতে হবে। রাতে আপু বান্ধবির সাথে হোষ্টেলে থাকবেন, পরদিন আবার চলে যাবেন। আমি বললাম আচ্ছা। আপুর ইউনিভার্সিটি ২ দিনের বন্ধ। মনে চেয়েছে ভাইটাকে দেখার, আর পুরানো বান্ধবির সাথে আড্ডা দিবার। তাই এই হঠাত ভ্রমন। আপু আমার বাসায় এসে পৌঁছালেন সকাল ৯ টার দিকে। কিছুক্ষন বসেই বললেন চল, তানিয়া অপেক্ষা করছে । চল। রিক্সায় করে তোমাদের কলেজ হোষ্টেলে পৌছালাম। আপুর বান্ধবি তানিয়া আপু এলেন, সাথে দেখি তুমি!!! আমি তানিয়া আপুকে চিনতাম না, তাই আপু পরিচয় করিয়ে দিলেন। আর তানিয়া আপু যখন তোমাকে পরিচয় করিয়ে দিতে চাইলেন তখন আপু কি বললেন তুমি তো জানোই - আমি চিনিতো, আমাদের গ্রামেই বাড়ি। আমাকে যখন বললেন তুই চিনিস না- আমি কি বলব ভেবে পাচ্ছিলাম না, কোনও মতে বললাম -হ্যাঁ। আমরা যখন ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম, তোমার বা আপুদের কেমন লাগছিল জানিনা, তবে আমার দারুণ আনন্দ লাগছিল। ভাবা যায়, আমি, এই আমি তোমার সাথে হেটেছি, কথা বলেছি, হেসেছি, লাঞ্চ করেছি….!!??
আর এই ঘটনাটার পরই আমি মারাত্তক দুর্বল হয়ে পরলাম। আপু চলে গেলেন, কিন্তু উনি তো বুঝলেন না যে আমাকে অসুস্থ করে রেখে গেলেন। সারাক্ষন যেদিকে তাকাই, শুধু তোমাকে দেখি। আমরা যে জায়গাগুলোতে গিয়েছিলাম, সে জায়গাগুলোতে আমি যাই-তোমার অনুভিতি পাবার আশায়। ঐ চায়ের দোকানে তুমি যে চেয়ারটাতে বসেছিলে, আমি সেই খানে যেয়ে বসে থাকি...
যা হোক, কিছুদিন পর কিছুটা স্বাভাবিক হতে পারলাম। আমার এখন ফাইনাল ইয়ার চলছে, পড়াশুনার বেশ চাপ, পাগলামি করলে হবে না -বুঝ দিলাম নিজেকে। কিন্তু আবার কেনো রিক্সায় যাবার পথে তোমার সাথে দেখা হতে গেলো? আর তুমি কেনই বা বলতে গেলে -কেমন আছেন?
আমার মাথা এবার পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেলো। বাসায় এসে নিজেকে বুঝাতে চাইলাম- যে আমি তোমার উপযুক্ত নই। তাই অযথা ভেবে ভেবে কষ্ট পেয়ে লাভ কি। কিন্তু কোনো কাজ হলো না, কি জন্যে যেনো মনে হলো তোমাকে জানাতে হবে বিষয়টা। মোবাইল টা নিয়ে ডায়াল করলাম কোথাও, চলে এলো তোমার মোবাইল নামবার টা। তারপর পুরা নাম্বারটা প্রেস করি, কিন্তু কল করার সাহস টা আর হয় না। দিনের মধ্যে বোধহয় কয়েক হাজার বার তোমার নাম্বারটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রেস করেছি, কিন্তু ডায়াল বোতাম টা প্রেস করার আগেই ক্যান্সেল বোতামে চাপ পরে যায়। বুঝতে পারলাম হবে না। তাই তো এসএমএস লিখলাম, তোমার মনের বিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য আবেদন পত্র চেয়ে। এবং এও তোমাকে রিকয়েস্ট করলাম, আবেদন পত্র পাব কিনা জানিও। কিন্তু তুমি কোনোই উত্তর দিলে না। আমার বুঝা উচিত ছিল, তুমি আমার এসএমএস টাকে মোটেই গুরুত্ত দাও নি- তোয়াক্কা ই করোনি। আমি তা না বুঝে মনে করলাম বোধহয় নিরাবতাই সম্মতির লক্ষণ।
আর তাই তো মাঝে মধ্যে তোমাকে এসএমএস দেয়া শুরু করলাম। নতুন করে স্বপ্ন দেখা শুরু করলাম ...
আমি কি বুঝতে পেরেছি যে আমার এসএমএস পেয়ে তুমি যারপরনাই বিরক্ত, বিব্রত ? তারপর ও হয়তোবা কষ্ট পেতাম না যদি তুমি নিজেই আমাকে জানাতে যে তুমি বিরক্ত। আমি অনেক সাহস করে যেদিন তোমাকে ফোন দিয়ে জানতে চাইলাম একটু কথা বললে কোনো সমস্যা কিনা, তুমি তো সেদিন ই বলতে পারতে যে তুমি আগ্রহী নও। তাহলেও আমি খুশি হতাম। কিন্তু আমি বুঝতে পারলাম যে, -আমি তোমার জন্য অনাকাংখিত- এই তথ্যটাও তোমার কাছ থেকে জানার যোগ্য আমি নই। তাই তো আপু যখন রাত দুপুরে আমাকে ফোন করে বললেন, অহেতুক কিছু কল্পনা কোরো না, -আর তাতেই আমি কেঁদেছিলাম। যা হোক তুমি ভালো থেকো, ভালোবাসার ভালো মানুষ পেয়ো...